এপ্রিল ২৭, ২০২৪

লক্ষ্মীপুর নিউজ

দিন বদলের প্রত্যয়ে

নির্বাচনী প্রচারনা লক্ষ্মীপুর-৩ সদর আসন সমন্বয়হীনতায় আওয়ামীলীগ আস্থা সঙ্কটে বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার:
বিএনপি’র দুর্গ হিসেবে খ্যাত লক্ষ্মীপুর-৩ সদর আসনে আঘাত হানতে চলেছে আওয়ামীলীগ। বর্তমানে এ আসনটিতে সরকারের মন্ত্রী থাকলেও তৃনমুলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সমন্বয়হীনতার অভাব রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক অভিজ্ঞরা। তবুও সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরে মাঠে শক্ত অবস্থানে রয়েছে আওয়ামীলীগ। মন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামালসহ একাধিক প্রার্থী নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এদিকে বিএনপিতে আস্থার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সাবেক এমপি ও বর্তমান কেন্দ্রীয় বিএনপি’র প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরীর উপর আস্থাহীন হয়ে পড়েছে একাংশের নেতা কর্মীরা। তাই তাকেও ছাড় দিতে রাজি নয় অন্য প্রার্থীরা। তবে উভয়দলের দলীয় সভানেত্রীর সিদ্দান্ত চুড়ান্ত বলে মত প্রকাশ করেন সকল প্রার্থী। অন্য দলগুলোও নিচ্ছে প্রস্তুতি।
নানা অভিযোগও রয়েছে তাদের। তবুও দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনাই শেষ কথা বলে জানান তারা।
জানা যায়,একটি পৌরসভা, একটি উপজেলা, দুটি থানা ও ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত লক্ষ্মীপুর-৩ সদর আসন। সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছে বেশ কয়েকজন। এর মধ্যে রয়েছে বর্তমান সরকারের বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল এমপি। জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু, সাবেক সভাপতি আলহাজ¦ এম আলা উদ্দিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র আলহাজ¦ আবু তাহের, মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামীলীগ সভাপতি অধ্যক্ষ এম এ সাত্তার, সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাশেম।
এ আসনে ২০১৪ সালে সংসদ নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্ধিতায় আওয়ামীলীগ থেকে এমপি নির্বাচিত হন শাহাজান কামাল। বর্তমান সরকারের শেষ সময়ে এসে মন্ত্রীত্ব পান তিনি।
এ কে এম শাহজাহান কামাল বলেন, ‘এ পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় ৪শ’ থেকে ৫শ’ কোটি টাকার উন্নয়ন করেছি। মানুষের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হয়েছি।’ নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে তাঁর ভাষ্য হলো এখনো যদি নির্বাচন হয় তাহলে জয়ী হবেন তিনি। দলের অন্য প্রার্থীদের ব্যাপারে আওয়ামীলীগের প্রবীন এ নেতা বললেন তিনি প্রার্থী হলে অন্য কেউ তার সঙ্গে প্রার্থী হবেননা। এব্যাপারে সবাই তাকে আশ^স্ত করেছেন বলে জানান মন্ত্রী।
তবে মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতিসহ অন্যরা।
গোলাম ফারুক পিংকু বলেন, ‘গত ৯বছরে যে উন্নয়ন কাজ হয়েছে এবং দলকে তারা যেভাবে সু-সংগঠিত করেছেন যে কোন নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী জয়ী হবে । বড় দলে একাধিক প্রার্থী থাকবে এমনটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, আমার মনে হয়না মন্ত্রীকে কোন প্রার্থী আশ^স্ত করেছেন।’
এম আলাউদ্দিন বলেন, ‘৫৬ বছর ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমনের আদর্শের রাজনীতি করে আসছি। আমৃত্যু এ সংগঠনের সাথে থাকবো। জেলার উন্নয়নে নিরলস কাজ করেছি, বঙ্গবন্ধু কন্যা আমাকে মুল্যায়নও করেছেন। আগামীতেও মানুষের সেবা করতে চাই।’
আবু তাহের বলেন, ‘আমি এমপি প্রার্থী হতে চাইনা, তাছাড়া মনোনয়নপত্র কেনার সময় আমি ব্যাংকক থাকবো।’
এম এ সাত্তার বলেন, ‘বিএনপি’র ক্ষমতামলে লক্ষ্মীপুর সন্ত্রাসের জনপদ ছিল, বিভিন্ন বাহিনী সুষ্টি করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল তারা। বর্তমান সরকার লক্ষ্মীপুরকে শান্তির জনপদ করেছেন। দেশব্যাপী উন্নয়নে মানুষ নৌকার বিকল্প কিছু আশা করেনা। দলীয় একজন কর্মী হিসেবে কাজ করছি। বিভিন্নভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াবার চেষ্টা করছি। জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকেই মনোনয়ন দিবে তার সাথে থেকে কাজ করবো।’
এদিকে আসন পূণঃরুদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও দুই বারের নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রচারনায় রয়েছেন। তাকে এবার ছাড় দিতে নারাজ সাহাবুদ্দিন সাবু। এ্যানির উপর আস্থা হারিয়ে দলীয় একাংশের নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন তিনি। এ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে সাবেক সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহর নামও আলোচনায় রয়েছে।
শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, ‘এ মূহুর্তে দেশনেত্রীর মুক্তির আন্দোলন নিয়ে ব্যাস্ত রয়েছেন তারা। জনগণের সঙ্গে আরো বেশী সম্পৃক্ততা রয়েছে জানিয়ে বিএনপি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে বলে জানান। যখনি নির্বাচন হবে তখনি সবার সামনে তা লক্ষ্যনীয় থাকবে।’ এ সরকারের আমলের বিগত নির্বাচনগুলোতো সুষ্ঠ ভোট হয়নি অভিযোগ করে বিএনপি’র এ নেতা আরো বলেন, ‘ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম। দেশনেত্রীকে মুক্ত করার জন্য দলীয় কোন গ্রুপিং নেই বড় দল হিসেবে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা চলছে।’
সাহাবুদ্দিন সাবু বলেন, ‘সুষ্ঠ নির্বাচনের দাবী আদায়ের পর ভোটে যাবে বিএনপি। মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। বিগত নির্বাচন গুলোতে সুষ্ঠ ভোট হয়নি, সুষ্ঠ ভোট হলে প্রত্যেকটি নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী জয়ী হতো।’ প্রার্থীতা নিয়ে তার বক্তব্য হলো ত্যাগী নেতা কর্মীরা পরিবর্তন চান। মনোনয়ন পেতে কারো বিরোধীতা করতে হবে এমনটি নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে জাতীয় পার্টি ও জেএসডি প্রার্থীসহ অন্যান্য দলগুলোর মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও নিচ্ছেন প্রস্তুতি। জেলা জাতীয়পার্টি থেকে জেলার সাধারণ সম্পাদক এম আর মাসুদ প্রার্থী হতে পারেন।
এম আর মাসুদ বলেন, ‘কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক সিদ্দান্তে জোট বেঁধে যথাযথ সুযোগ সুবিধা আমরা পাইনা। তাই এবার প্রার্থী হতে চাই।’ কেন্দ্রীয় সিদ্দান্তই চুড়ান্ত বলে জানান তিনি।
জেএসডি প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ বেলায়েত হোসেন বেলাল বলেন, ‘টেন্ডার সন্ত্রাস বন্ধ করার রাজনৈতিক সিদ্দান্ত নিতে হবে, জনগণকে সাথে নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া প্রত্যাশা করছি। যে কোন নির্বাচনের জন্য জেএসডি প্রস্তুত রয়েছে।’

Please follow and like us:
error20
fb-share-icon
Tweet 20
fb-share-icon20

About Author