স্টাফ রিপোর্টার:
লক্ষ্মীপুরে অদক্ষ, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও ড্রাইভিং লাইসেন্স বিহীন চালকরা রাস্তায় চালাচ্ছে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা। এতে করে জেলাব্যাপী প্রতিনিয়ত সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল বাড়ছেই। গেলো এক বছরে জেলার বিভিন্ন স্থানে সড়ক দূর্ঘটনায় শতাধিক যাত্রী ও চালকরা নিহত হয়েছেন। আরো দুই শতাধিক আহতসহ অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন এসব দূর্ঘটনায়। চালকদের অভিযোগ লাইসেন্স প্রাপ্তিতে বিআরটিএ কার্যালয়ে গিয়ে দালালদের খপ্পরে পড়াসহ সরকার নির্ধারিত টাকার চাইতে দ্বিগুন টাকা বেশী লাগায় ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে পারছেননা তারা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন সচেতন মহল।
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আনোয়ার হোসেনের দেয়া তথ্য মতে লক্ষ্মীপুরে গেলো এক বছরে সড়ক দূর্ঘটনায় শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো দুই শতাধিক। এর মধ্যে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে অনেকে। প্রতিনিয়ত সড়ক দূর্ঘটনার শিকার হয়ে মৃত্যুর মিছিল বাড়ছেই। এছাড়া প্রতিদিন হাসপাতালে দূর্ঘটনার শিকার হয়ে ভর্তি হচ্ছে মানুষ। এদের মধ্যে বেশীর ভাগই সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যাত্রী ও চালক দুর্ঘটনার শিকার হন বলে জানান তিনি।
লক্ষ্মীপুর নিউজের পর্যবেক্ষনে এমনটি দেখা গেছে। সম্প্রতি রামগতির আলেকজান্ডার এলাকায় ট্রাক ও সিএনজি চালিত অটো রিক্সার মুখোমুখি সংঘর্ষে এক নারীনহ দুইজন প্রাণ হারান। এভাবে প্রতিনিয়ত সড়ক দূর্ঘটনা বাড়ছে। বেশীর ভাগ দূর্ঘটনায় সিএনজি চালিত আটোরিক্সা থাকছেই।
এদিকে বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ নিরাপদ যাত্রা প্রত্যাশা করেন। তাদের মতে বেপরোয়া গাড়ী না চালানো, অতিরিক্ত যাত্রী না উঠানো, ড্রাইভিং লাইসেন্স গলায় ঝুলানো না থাকলে ওই গাড়ীতে না চলায় ভালো। তবে সাধারণ মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে চলাচল করতে বাধ্য হন বলে জানান।
এদিকে নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনের লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার আহবায়ক প্রভাষক কার্তিক সেন গুপ্ত বলেন, আগে রিক্সা চালাতো যারা তারা সব এখন সিএনজি চালিত অটোরিক্সার চালক। জেলার শতকরা ৯০জন চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই, অদক্ষ, অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালকরা যাত্রী নিয়ে রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত মারাত্মক ধরণের সড়ক দূর্ঘটনার শিকার হন। এতে করে প্রতিনিয়ত প্রাণহানিসহ পঙ্গুত্ব হওয়ার ঘটনা ঘটে এ জেলায়।
একটি দূর্ঘটনা একটি পরিবারের জন্য সারা জীবনের কান্না, যে পরিবারের উপার্জিত ব্যাক্তিটি মারা যায় অথবা পঙ্গু হয় তখন সে পরিবারটিই ওই যন্ত্রনাটি উপভোগ করেন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সড়ক দূর্ঘটনা কম ঘটবে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি। একইসাথে তিনি চালকদের প্রশিক্ষন ও সহজ প্রক্রিয়ায় ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তি নিশ্চিতসহ প্রশিক্ষনের দাবী জানান।
জেলার বেশ কয়েকজন সিএনজি চালকের সাথে আলাপ কালে তারা অভিযোগ করে বলেন, বিআরটিএ কার্যালয়ে গেলে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য সরকার নির্ধারিত ১৭৮২ টাকা ও অপেশাদারদের জন্য ৩০৪২ টাকা নির্ধারণ থাকলেও দালাল ছাড়া কোন কাজই হয়না ওই কার্যালয়ে। লাইসেন্স পেতে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। কারো কারো অভিযোগ রয়েছে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য দালালদের টাকা দিয়েও লাইসেন্স পাওয়া যায়না। কর্মকর্তাদের যোগ সাজশে দালালরা ওই কার্যালয়ে এখনো বেপরোয়া বলে অভিযোগ করেন অনেকে।
দিন এনে দিনে খাওয়া অধিকাংশ চালকরা বাড়তি টাকা দিতে না পেরে লাইসেন্স করতে পারেনা। তাই বাধ্য হয়ে লাইসেন্স ছাড়াই অবৈধভাবে তারা রাস্তায় গাড়ী চালান বলে জানান। ট্রাফিক পুলিশকে মাসিক হারে চাঁদা দিতে হয় বলে অভিযোগ অধিকাংশ চালকের।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সম্প্রতি দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বিআরটিএ লক্ষ্মীপুর সার্কেলের সহকারি-পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, বিআরটিএ কার্যালয়ে কোন দালালের স্থান নেই, ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য কেউ অফিসে না আসলে তাদের বাসায় গিয়ে লাইসেন্স দেয়াতো সম্ভবপর নয়। রাস্তায় লাইসেন্স ছাড়া গাড়ী চললে সেটি ট্রাফিক পুলিশের বিষয় বলে জানান এ কর্মকর্তা।
এক সাক্ষাতকারে লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার আ স ম মাহতাব উদ্দিন জানান, সড়ক দূর্ঘটনা রোধ করতে চালকদের নিয়ে বিভিন্ন সচেতনমুলক সভা ও প্রশিক্ষনের আয়োজন করা হয়। ড্রাইভিং লাইসেন্স বিহীন গাড়ী চালালে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়, যাদের গাড়ীর কাগজপত্র নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই, তাদের মামলা দেয়া হয়, জরিমানা করা হয়। একাধিকবার জরিমানা করা হলে গাড়ী বাজেয়াপ্ত করা হয়। পুলিশ লাইনে বহু গাড়ী জমা পড়ে আছে। যে কোন চালক নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে বিআরটিএ কার্যালয়ে দালালের খপ্পরে যেন না পড়ে সে জন্য ট্রাফিক বিভাগ তাদের সহযোগীতা করছেন বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা। পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদা নেওয়ার কোন সুনিদিৃষ্ট অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ^াস দেন তিনি।
এদিকে সচেতন মহলের মতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় এসব গাড়ীর লাইসেন্স হচ্ছেনা। এতে করে একদিকে রাজস্ব আয় বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। অন্যদিকে বাড়ছে দূর্ঘটনা, অকালে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। তারা আরো মনে করেন দু-একটি সভা সেমিনার করে দায়সারাভাবে কাজ করে যাচ্ছে বিআরটিএ কার্যালয়। এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের তদারকি আরো বাড়ানোর পরামর্শ সচেতন মহলের।
More Stories
গণিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অভিভাবক সমাবেশ
মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে লক্ষ্মীপুরে মতবিনিময় সভা
লক্ষ্মীপুরে হাজারো নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে জামায়াতের কর্মী সম্মেলন