নিউজ ডেস্ক :
লক্ষ্মীপুরের বুকে এখন আর আগের মতো খেলার মাঠ নেই, ফাঁকা জায়গাও খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু আজকের যারা শিশু-কিশোর তাদের সুষ্ঠুভাবে বেড়ে উঠতে প্রয়োজন খেলার মাঠ, মুক্ত আকাশের নীচে নির্বিঘেœ ছোটাছুটি করার সুযোগ। মাঠগুলো হারিয়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে জেলার ভবিষ্যত-প্রজন্ম। এখন ঘরোয়া পরিবেশেই সময় কাটাতে হচ্ছে তাদের। তারা হয়ে পড়ছে টিভি-কম্পিউটার, ভিডিও গেমস-নির্ভর। শহরের পার্ক, খেলার মাঠ এবং উন্মুক্ত স্থানের গুরুত্ব অনেকটা নগরবাসীর সামাজিকীকরণ, বিনোদন, খেলাধুলা, মানসিক প্রশান্তি এবং শরীর চর্চার ক্ষেত্র সৃষ্টি করে। শহরের মতো গ্রামের মানুষগুলোও এখন অনেকটাই অসহায়। পাড়ায় পাড়ায় ঐতিহ্যবাহী গোল্লাছুট, হা-ডু-ডু, কানা মাছি, দাবা, হ্যান্ডবল, সাঁতার, ব্যাডমিন্টন লাঠি খেলাসহ হৈ চৈ করে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলা এখন আর হয়না।
জানা যায়,
জেলার শিশু-কিশোরসহ প্রায় ১৬ লাখ জনগোষ্ঠির বিনোদনের জন্য একমাত্র খেলার মাঠ হিসেবে ১৯৯৬ সালে ১১ একর জমির ওপর লক্ষ্মীপুর জেলা স্টেডিয়াম প্রতিষ্ঠিত হয়। এর আগে জেলার মানুষ নিজ নিজ এলাকায় প্রতিষ্ঠিত স্কুল কলেজ মাঠে বিকেল বেলায় খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। পাড়ায় পাড়ায় ক্লাব ছিল। খেলাধুলা চলতো বিভিন্ন প্রকার।
কেউ খেলতেন গোল্লাছুট, কেউ হা-ডু-ডু, কানা মাছি, কেউবা দাবা, হ্যান্ডবল, আবার কেউ ব্যাডমিন্টন লাঠি খেলাসহ হৈ চৈ করে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। বর্তমানে এখন আর আগের মতো এসব খেলা হয়না। গ্রামে গ্রামে প্রতিষ্ঠিত ক্লাবগুলো এখন প্রায় বিলুপ্ত, হারিয়ে যাচ্ছে খেলার মাঠ গুলো।
জেলার স্টেডিয়ামটি ছাড়া পাড়া-মহল্লার আনেক মাঠ এখন খালি নেই, সম্প্রসারিত একাডেমিক ভবন নির্মাণ, বাউন্ডারি না থাকা ও তদারকির অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে এসব মাঠ।
সরেজমিন, সদর উপজেলার টুমচর ইউনিয়নের টুমচর আসাদ একাডেমী উচ্চ বিদ্যালয় এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা যায়, বিদ্যালয়টির সামনে একটি বড় খেলার মাঠ ছিল। ওই এলাকার ক্রিড়ামোদি মানুষসহ সকলের কাছে চিরচেনা ছিল ওই স্কুল মাঠ। কোন রাজনৈতিক সমাবেশ হলেও ওই মাঠকেই বেছে নিতেন রাজনৈতিক নেতারা। আর বর্ষাকালে প্রতিদিন ফুটবল খেলা হতো ওই মাঠে, কখনো টূর্ণামেন্ট বা কখনো স্থানীয় যুবকরা খেলায় মেতে উঠতেন, প্রতিযোগিতায় মেতে উঠতেন বিবাহিত ও অবিবাহিতরাও, শীতের মৌসুমে ক্রিকেট খেলতো ছাত্র ও যুব সমাজ। খেলার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন বিভিন্ন এলাকার খেলোয়াড়রা।
বর্তমানে ওই মাঠের ওপর একটি কলেজ স্থাপন করা হয়, এতে করে খেলার মাঠটি সংকুচিত হয়ে গেছে, একইভাবে পাশ্ববর্তী ইউনিয়ন শাকচর মদিন উল্লাহ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, শহরের কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠেরও একই অবস্থা, ওই মাঠগুলোতে এখন সম্প্রসারিত ভবনের কাছ চলছে। এভাবে জেলার অধিকাংশ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ হারিয়ে যাচ্ছে।
এ দিকে জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ মাঠ, দালাল বাজার ডিগ্রী কলেজ ও এনকে উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, রামগতির আসম আব্দুর রব কলেজ মাঠ, রায়পুরের এল এম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, চন্দ্রগঞ্জের কফিল উদ্দিন ডিগ্রী কলেজ মাঠ ও প্রতাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ, কমলনগরের হাজির হাট মিল্লাত একাডেমী মাঠ, উপকূল কলেজ মাঠ এখন সংস্কারের অভাবে খেলা অনুপুযোগী হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে
বর্তমান সময়ে এসেও পরিপূর্ণতা পায়নি জেলার স্টেডিয়ামটি। যেখানে নেই পরিপূর্ণ গ্যালারি, গড়ে উঠেনি ইনডোর স্টেডিয়াম, সুইমিং পুল, জিমনেশিয়াম।
এতে করে প্রতিভা থাকা স্বত্তেও গড়ে উঠছেনা জাতীয় মানের খেলোয়াড়, আর আগ্রহ হারাচ্ছে তরুন সমাজ। শিশু-কিশোররা খেলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
খেলার জন্য মাঠ না পেয়ে শিশুদের বাড়ির ছাদ, উঠানে কিংবা বারান্দাতেই খেলতে হচ্ছে। অনেক শিশু, কিশোর ও যুব সমাজ টিভি-কম্পিউটার, ভিডিও গেমস-নির্ভর হয়ে পড়ছে, আবার অনেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছেন বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
সদর উপজেলার টুমচর গ্রামের প্রগতি সংঘ নামের একটি ক্লাব (বর্তমানে বিলুপ্ত) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহবুবুল ইসলাম বাবলু জানান, কয়েক বছর আগেও শিশু কিশোররা বিকেলে খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকতো, এখন তারা দোকানে বসে কিংবা পাড়া মহল্লায় আড্ডায় সময় কাটাচ্ছে, এতে করে ইভটিজিংয়ে জড়ানো ও মাদকাসক্ত হয়ে পড়াসহ সামাজিক অপরাধ বাড়ছে, পাশাপাশি শিশুরা খেলার সুযোগ না পেয়ে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে বলে মনে করেন তিনি। সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙ্গে পড়ায় অনেক ক্লাব এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে জানিয়ে তিনি মাঠগুলো সংস্কারের দাবী জানান। জেলার বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গও একই দাবী জানান।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের দৈহিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশের জন্য খেলাধুলার চর্চা অত্যন্ত জরুরি। খেলার মাধ্যমে তাদের মগজে রক্তসঞ্চালন ভালো হয়। শৈশবে খেলার চর্চা না থাকলে শিশুদের আত্মবিশ্বাসের অভাব থেকে যায়। এ থেকে সহজেই তাদের পরাজয়-বরণের মানসিকতা তৈরি হয়।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন জানান, জেলাবাসীর বিনোদনের জন্য গড়ে উঠা একমাত্র জেলা স্টেডিয়াম বর্তমানে সংস্কার প্রয়োজন, এর পাশে ইনডোর স্টেডিয়াম, সুইমিং পুল ও জিমনেশিয়াম স্থাপন করা এখন সময়ের দাবী, একই সাথে বিভিন্ন বিদ্যালয় মাঠ গুলো সংস্কার করতে স্ব স্ব উপজেলা পরিষদ ও স্থানীয় এলজিইডি’র নিজস্ব অর্থায়ন বাড়ানোর দাবী জানান তিনি। এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এমনটি প্রত্যাশা জেলাবাসীর।
হারিয়ে যাচ্ছে লক্ষ্মীপুরের খেলার মাঠ

Please follow and like us:
More Stories
লক্ষ্মীপুরে বি.কে.বি ক্লাব এর উদ্যোগে জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা
লক্ষ্মীপুরে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও অভিভাবক সমাবেশ
লক্ষ্মীপুর পালের হাটে জমি দখল করার পায়তারার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন