অক্টোবর ১, ২০২৩

লক্ষ্মীপুর নিউজ

দিন বদলের প্রত্যয়ে

মেঘনার তীর রক্ষা বাঁধে ফের ধস, আতঙ্কে মানুষ

নিউজ ডেস্ক : লক্ষ্মীপুরের কমলনগর মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধে ফের ধস দেখা দিয়েছে। ভেঙে গেছে বাঁধের প্রায় ১৫০ মিটার বাঁধ। হুমকির মুখে রয়েছে পুরো বাঁধ। বর্ষার শুরুতেই বাঁধে ধস দেখা দেওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। দ্রুত সংস্কার ও ভাঙন রোধে পর্যাপ্ত বাঁধ নির্মাণ না হলে নির্মাণাধীন বাঁধসহ বিস্তৃর্ণ এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
রোববার (১৫ জুলাই) ভোররাতে উপজেলার মাতাব্বর হাট এলাকায় নির্মাণাধীন মেঘনা তীর রক্ষা বাঁধে ধস নামে। এতে নদীতে ভেঙে পড়েছে ব্লক বাঁধের প্রায় ১৫০ মিটার।
দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু না হওয়ায় বাঁধের দুই পাশের এলাকায় অব্যাহতভাবে ভাঙছে। আশপাশের এলাকায় ভাঙনের কারণে বাঁধ ধসে পড়েছে। গত বর্ষা মৌসুমেও ওই বাঁধে পাঁচবার ধস নামে। অনিয়মের মধ্য দিয়ে নিন্মমানের কাজ করায় বারা-বার বাঁধে ধস নামছে বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে তীর রক্ষা বাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়। এক কিলোমিটার নির্মাণাধীন বাঁধের দুই পাশে মেঘনা অব্যাহতভাবে ভাঙছে। ভাঙন বাঁধের সিমানা ফেরিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়েছে। এতে করে বাঁধ দুর্ভল হয়ে পড়েছে। যে কারণে বাঁধে ধস নামে। ধস ঠেকাতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বালু ভর্তি কিছু জিও ব্যাগ ডাম্পিং করতে দেখা গেছে।
বর্ষার শুরুতেই নদীর তীর রক্ষা বাঁধে ধস দেখা দেওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। আতঙ্কিত বাসিন্দারা জানান, কমলনগরে নদী ভাঙন রোধে মাত্র এক কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ হয়েছে। এই উপজেলা রক্ষায় তা যথেষ্ট নয়। প্রায়োজন আরও ৮ কিলোমিটার বাঁধ। যেটুকু বাঁধ হয়েছে তাতেও নানা অনিয়ম হয়েছে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বাঁধের ভিতরে (নদীতে) ৪৫ মিটার জিও ব্যাগ (বালু ভর্তি বিশেষ ব্যাগ) ও ব্লক যথাযথভাবে ডাম্পিং না করেই বাঁধ নির্মাণ করে। এতে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্মমানের বালু ও জিও ব্যাগ। এসব কারণে গত বছর বাঁধে ৫ বার ধস নামে। এছাড়াও অন্যত্র থেকে মাটি সংগ্রহ করে বাঁধ নির্মাণ করার কথা থাকলেও নদীর তীর থেকে মাটি উত্তোলন করে বাঁধ নির্মাণ করায় বার-বার বাঁধে ধস নামছে। এবার বর্ষার শুরুতেই ফের ধস দেখা দেয়।
ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে আক্ষেপ করে স্থানীয় লোকজন বলেন, পাশ্ববর্তী রামগতি উপজেলা সদর আলেকজান্ডারে সেনা বাহিনীর মাধ্যম্যে সাড়ে তিন কিলোমিটার বাঁধ সফলভাবে নির্মাণ হয়েছে। এতে রক্ষা পেয়েছে উপজেলা সদরসহ বিস্তৃর্ণ জনপদ। কিন্তু কমলনগর মাত্র এক কিলোমিটার বরাদ্দ হয়েছে। তা সেনাবাহিনীকে দিয়ে না করিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করিয়েছে। যে কারণেই বাঁধে বার বার ধস নামছে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এজিএম মাসুদ রানা অভিযোগ অস্বীকার করে লক্ষ্মীপুর নিউজকে বলেন, কমলনগরের মেঘনার ভাঙন প্রতিরোধে মাত্র এক কিলোমিটার বাঁধ যথেষ্ট নয়। তীর রক্ষা বাঁধের দুই পাশেই ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এতে করে নির্মাণাধীন বাঁধের ওপর প্রভাব পড়েছে। এছাড়াও নদীতে জোয়ার ও পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব পরিস্থিতির কারণে বাঁধের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাৎক্ষণিক সংস্কার শুরু করেছি। এদিকে বাঁধ ধসের খবর পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুমিল্লা (পূর্বাঞ্চল) প্রধান প্রকৌশলী বাবুল চন্দ্র শীল পরিদর্শনে এসে বলেন, বাঁধ ধসের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল এসেছি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বালু ভর্তি জিও বেগ ফেলছে। এছাড়া পর্যাপ্ত ব্লক রয়েছে এতে আতন্কিত হওয়ার কিছুই নেই। এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের বাঁধ নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে উন্নয়ণ প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু তা অনুমোদন না হওয়ায় কাজ হচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের জন্য ১৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। বরাদ্দকৃত টাকায় কমলনগরে এক কিলোমিটার, রামগতির আলেকজান্ডারে সাড়ে তিন কিলোমিটার ও রামগতিরহাট মাছঘাট এলাকায় এক কিলোমিটার বাধ নিম্মাণ হওয়ার কথা। ২০১৫ সালের ১ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ১৯ ইঞ্জিনিয়ারি কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন আলেকজান্ডার এলাকায় ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করে সাড়ে তিন কিলোমিটার সফলভাবে বাস্তবায়ন করে। এদিকে ওই বরাদ্দের ৪৮কোটি টাকায় কমলনগরে এক কিলোমিটার কাজ পায় নারায়নগঞ্জ ডকইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিঃ। অর্থ বরাদ্দের দুই বছর পর ২০১৬ সালের শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠানটি ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংকে দিয়ে কাজ শুরু করে। ওই বছর নিম্মমানের বালু ও জিও ব্যাগ দিয়ে কাজ শুরু করায় স্থানীয়দের চাপের মুখে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। অনিয়মের প্রতিবাদে ও যথাযথভাবে কাজ করার দাবীতে ওই সময় মানববন্ধন করে স্থানীয় এলাকাবাসী। পরবর্তীতে একই বছরের ২৩ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বাঁধ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়।

Please follow and like us:
error20
fb-share-icon
Tweet 20
fb-share-icon20

About Author

আরও পড়ুন