মার্চ ২৯, ২০২৪

লক্ষ্মীপুর নিউজ

দিন বদলের প্রত্যয়ে

পিছিয়ে পড়া লক্ষ্মীপুরে সম্ভাবনা অনেক : মাকসুদ কামাল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও লক্ষ্মীপুরের কৃতি সন্তান অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেছেন, ‘পিছিয়ে পড়া লক্ষ্মীপুরে সম্ভাবনা রয়েছে অনেক।’ লক্ষ্মীপুর নিউজের নিয়মিত আয়োজন ‘কেমন লক্ষ্মীপুর দেখতে চান’ শীর্ষক জেলার উন্নয়ন সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে নানা বিষয় তুলে ধরলেন এ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ।
সাক্ষাতকার নিয়েছেন মুজাহিদুল ইসলাম নোবেল।
একান্ত সাক্ষাতকারে মাকসুদ কামাল বলেন, ‘লক্ষ্মীপুর একটি সম্ভাবনাময় জেলা। এখানে নদী বন্দর রয়েছে। এখানকার মানুষ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী। লক্ষ্মীপুরে যেসব স্কুল, কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলোতে অতীত থেকেই ছাত্র-ছাত্রীরা ভালো ফলাফল করে আসছে। এখানে মেধাবীদের সংখ্যা অন্যান্য জেলার তুলনায় বেশি। এজন্যে লক্ষ্মীপুরে সরকারিকর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ ও ব্যবসায়ীদের সংখ্যাও বেশি। তবে পরিত্রাপের বিষয় হলো আর্থ-সামাজিকভাবে অগ্রসরমান এ জেলার উন্নয়ন কর্মকা- ও সাংস্কৃতিক বিকাশ আশানুরূপভাবে হয়নি। দেশের অনেকগুলো প্রশ্চাতপদ জেলা আছে যেগুলোতে অশিক্ষিত মানুষের আধিক্যতা থাকায় মাদকের ছোবল অনেক বেশি। কিন্তু লেখাপড়ার দিক দিয়ে অগ্রসর হওয়ার পরেও লক্ষ্মীপুরের তরুন সমাজ মাদকের ছোবলে ক্রমাগত ভাবে ধ্বংসের পথে হাটছে। এতে করে যুব শক্তির যে সম্ভাবনা রয়েছে তা ক্ষীণ হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য করণীয় হলো প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা দানের পাশাপাশি মূল্যবোধ, নৈতিকতা, সাংস্কৃতিক বিকাশে আনুষঙ্গিক কর্ম-কা- পরিচালনা করা, যেগুলোর মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের আত্ম উপলব্ধি বাড়ে এবং তাদের মাঝে সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্রকে সেবা দেয়ার প্রত্যয় জন্ম নেয়।
শিক্ষা ক্ষেত্রে রাজনৈতিক আধিপত্য সহনশীল পর্যায়ে নিয়ে আনা উচিত। শিক্ষার্থীদের কখনো অতিরাজনীতির সাথে জড়িত হওয়া সমীচীন নয়। আর এ স্লোগানটি শিক্ষকদের মাধ্যমে ছাত্র-ছত্রীদের মাঝে পৌঁছাতে হবে। এভাবে যদি শিক্ষার্থীদেরকে নিজের জন্য ও জেলার জন্য একটি আলোকিত ও সুন্দর ভবিষ্যৎ রচনার স্বপ্ন দেখানো যায় তাহলে আমরা অদূর ভবিষ্যতে সাংস্কৃতিকভাবে উন্নত লক্ষ্মীপুর জেলা দেখতে পাবো।
অবকাঠামোর দিক থেকে লক্ষ্মীপুর এখনো উন্নত হতে পারেনি। রেললাইনের অনুপস্থিতি, মহাসড়কের সংকির্ণতা, অকার্যকর নৌ-বন্দর, পর্যটন কেন্দ্রের অভাব, অর্থনৈতিক জোনের অভাব প্রভৃতি কারণে আমরা অবকাঠামোর দিক দিয়ে এখনো অনুন্নত। এ সমস্যার আশু সমাধানে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তা ও শিক্ষাবিদদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। তাঁরা যদি স্ব স্ব অবস্থান থেকে কম-বেশি অবদান রাখেন তাহলে আমরা ভবিষ্যতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক একটি সুন্দর লক্ষ্মীপুরের পাশাপাশি উন্নত অবকাঠামোর লক্ষ্মীপুরও দেখতে পাবো।
একটি বিদেশী রাষ্ট্র আমাদের লক্ষ্মীপুরে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য কাজ করছে। এ কাজটি যদি সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয় তাহলে আমাদের লক্ষাধিক বেকারের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে। এতে করে রেল পথ তৈরি, সড়ক ও নৌ-পথের সম্প্রসারণ, আধুনিক আবাসন ব্যবস্থা চালু, পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠা এমনকি ভবিষ্যতে লক্ষ¥ীপুরে বিমান বন্দরও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
একটি আধুনিক শহর গড়ে তোলার জন্য বিশ^বিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠিত স্কুল-কলেজের প্রয়োজন। লক্ষ্মীপুরে একটি নতুন বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অঙ্গীকার রয়েছে। বিশ^বিদ্যালয়ের গ্রাফ্ট-অ্যাক্ট প্রস্তুত হয়ে গেছে এবং তা এখন সংসদে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। আমরা চাই বিশ^বিদ্যালয়টি যেন ৩০০ একর জমিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়। কারণ দেশের অন্যান্য জায়গায় ৫০-৬০ একরজমিতে যেসব বিশ^বিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়েছে সেগুলোতে জায়গার স্বল্পতার কারণে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন বিভাগ চালুকরা সম্ভব হচ্ছেনা। একটি বিশ^বিদ্যালয় যেহেতু হাজার বছর ধরে জাতি ও সমাজ গড়ার ক্ষেত্রে অবদান রাখে, তাই এ হাজার বছরের স্বপ্নকে মাথায় রেখেই বিশ^বিদ্যালয়ের অবকাঠামো তৈরি করতে হবে।
লক্ষ্মীপুর শহরকে বিভাজনকারী রহমতখালি নদীতে শহরের ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত বর্জ্য ফেলছে। এতে আমাদের পরিবেশও বায়ু দূষিত হয়। তাছাড়া বৃষ্টিপাতের সময় নদীর ময়লা পানি যত্রতত্র ছড়িয়ে পড়ে এবং পরিবেশকে দূষিত করে তোলে। আর এ দূষণের কারণে লক্ষ্মীপুরের প্রাকৃতিক পরিবেশের বহুমাত্রিক ক্ষতি হচ্ছে। বায়ু দূষণের কারণে অ্যাজমা, শিশুদের চর্মরোগসহ বিভিন্নধরনের রোগ-ব্যাধী ছড়াচ্ছে। তাই ভবিষ্যতে অবকাঠামো উন্নয়নের কর্মসূচি গ্রহণের ক্ষেত্রে পরিবেশকে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ টেকসই ও পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূচক। লক্ষ্মীপুরেও এমন অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। তাহলে আমরা পাবো একটি আদর্শ শহর, দেশ পাবে উন্নয়নেরগতি।’

Please follow and like us:
error20
fb-share-icon
Tweet 20
fb-share-icon20

About Author